SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - ইংরেজ শাসন আমলে বাংলায় প্রতিরোধ, নবজাগরণ ও সংস্কার আন্দোলন - বেগম রোকেয়া

বিশ শতকের শুরুতে যখন ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বলছে, বাঙালি মুসলমান মেয়েরা তখনও পিছিয়ে ছিল। মুসলমান সমাজের মেয়েরা সব অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। লেখাপড়া শেখা তাদের জন্য একরকম নিষিদ্ধই ছিল। সমাজ ধর্মের নামে তাদের রাখা হতো পর্দার আড়ালে গৃহবন্দী করে । মুসলমান মেয়েদের এই বন্দিদশা থেকে যিনি মুক্তির ডাক দিলেন, তাঁর নাম, বেগম রোকেয়া। ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলি সাবের ।

মায়ের নাম মোসাম্মৎ বাহাতননেসা সাবেরা চৌধুরানি। ঐ অঞ্চলে সাবের পরিবার ছিল অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত এবং রক্ষণশীল। মেয়েরা ছিল খুবই পর্দানশিন। বেগম রোকেয়া তাঁর বড় ভাই ইব্রাহিম সাবের এবং বড় বোন করিমুন্নেসার কাছে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁকে পড়াশোনা করতে হতো গভীর রাতে, যাতে বাড়ির লোক টের না পায়। বড় ভাইয়ের একান্ত উৎসাহে তিনি উর্দু, আরবি, ফারসি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। স্কুলে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হলেও তিনি বাংলা ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেন । কিশোর বয়স থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন ।

সাহিত্যচর্চার বিষয়বস্তুও ছিল নারী সমাজকে নিয়ে । তিনি সমাজের কুসংস্কার, নারী সমাজের অবহেলা-বঞ্চনার করুণ চিত্র নিজ চোখে দেখেছেন। যা উপলব্ধি করেছেন, তা-ই তিনি তাঁর লেখার মধ্যে তুলে ধরেছেন। সমাজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন নারীদের করুণ দশা, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নমুনা। তাঁর “অবরোধবাসিনী', 'পদ্মরাগ', 'মতিচূর', 'সুলতানার স্বপ্ন' প্রভৃতি গ্রন্থে সে চিত্র ফুটে উঠেছে । বিবাহিত জীবনে তিনি তাঁর স্বামীর কাছ থেকে জ্ঞানচর্চার উৎসাহ লাভ করেছিলেন । স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তাঁর জীবনের বাকি সময়টা নারী শিক্ষা আর সমাজসেবায় ব্যয় করেন । তিনি স্বামীর নামে ভাগলপুরে একটি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন । ১৯১১ সালে তিনি কোলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল উর্দু প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করেন । ১৯৩১ সালে এটি উচ্চ ইংরেজি গালর্স স্কুলে উন্নীত হয় । মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং সুপারিনটেনডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন ।

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯১৬ সালে কোলকাতায় আঞ্জুমান খাওয়াতিনে ইসলাম (মুসলিম মহিলা সমিতি ) প্রতিষ্ঠা করেন । নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর নেতৃত্বে সমিতি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার মনে নারীর প্রতি অত্যাচার ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে ছিল তীব্র ক্ষোভ ও বিদ্রোহের সুর। তিনি কর্মের মধ্যে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন । ১৯৩২ সালে এই মহীয়সী নারী কোলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন । 

Content added || updated By

Promotion